বড় বড় প্রতিষ্ঠানের মিটিং রুম বা সভাকক্ষে কী হয়? নিশ্চয়ই জরুরি বিষয় নিয়ে কর্মকর্তারা আলোচনা করে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন। সভাকক্ষে অনেক কর্মীর ভাগ্য নির্ধারণ যেমন হয়, তেমনি প্রতিষ্ঠানসংক্রান্ত রদবদলের বিষয়টিও আলোচনায় থাকে। অ্যাপল, গুগল, ফেসবুকের মতো বড় প্রতিষ্ঠানের সভাকক্ষগুলো এর ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু মিটিং রুমের ‘বস’ বা প্রধান হিসেবে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা কী করেন, তা জানার আগ্রহ থাকতে পারে। চলুন, জেনে আসি মিটিং রুমে সাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সিইওর কার্যকলাপ:
টেসলার প্রধান নির্বাহী এলন মাস্ক: এলন মাস্ক খুব কড়া বস। কর্মীদের তটস্থ রাখেন তিনি। আর তাঁর মিটিং, সে-ও এক ভয়ের জায়গা। কর্মীদের তাঁদের সংশ্লিষ্ট কাজের সবকিছু নখদর্পণে থাকতে হবে। কাজের অগ্রগতি, সময়ের তালজ্ঞান চাহিবামাত্র হাজির চাই। কেউ ফেল করলেই চাকরি নট! এলন মাস্ক চান তাঁর মিটিংয়ে উপস্থিত কর্মকর্তারা যেন সব প্রস্তুতি সেরে তবেই আসেন। মিটিং হবে উচ্চমানসম্পন্ন। কাজের জন্য তাঁর বেঁধে দেওয়া সময়সীমা মেনে চলতেই হবে। তা না হলে উপযুক্ত জবাব থাকতে হবে। যদি কারও এ ধরনের বস থাকে, তাঁর ভালোই জানার কথা বসের মতিগতি। বসকে ম্যানেজ করতে প্রস্তুতিটাও হওয়া চাই উপযুক্ত। টেসলারের সাবেক এক কর্মী তাঁর অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেছেন, ‘মিটিংয়ের সময় প্রস্তুত হয়ে থাকতাম। তা না হলে ধরা খেতে হতো। কোনো বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তর দিতে হতো চটপট। অপ্রস্তুত হলে মনে মনে প্রমাদ গোনা ছাড়া উপায় ছিল না।
ফেসবুকের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা শেরিল স্যান্ডবার্গ: স্টাইলিস বস হিসেবে খ্যাত শেরিল স্যান্ডবার্গ। তাঁর মন্ত্র হচ্ছে—সুনির্দিষ্ট হওয়া। প্রতিটি মিটিংয়ের সময় তাঁর হাতে একটি স্পাইরাল বাউন্ড নোটবুক দেখা যাবে। ওই নোট বইতে লেখা থাকবে মিটিংয়ের সব বিষয়বস্তু। পয়েন্ট আকারে লেখা ওই বিষয়গুলো একটি একটি করে তুলে মিটিং রুমে আলোচনা করবেন। করণীয় ঠিক করবেন। একটি করে পয়েন্ট আলোচনার পর তিনি ক্রস চিহ্ন দিয়ে সেগুলো কেটে দেবেন। সব কটি শেষ হলে পুরো পাতা এক টান দিয়ে কেটে পরের পাতায় চলে যাবেন। পুরো এক ঘণ্টার মিটিং যদি ১০ মিনিটে শেষ হয়ে যায়, তখনই মিটিং খতম। বাড়তি কথা মোটেও পছন্দ নয় তাঁর।
প্রয়াত অ্যাপল সিইও স্টিভ জবস: বিশ্বের অন্যতম মূল্যবান প্রতিষ্ঠান হিসেবে অ্যাপলকে তুলে আনতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন স্টিভ জবস। তাঁর হাত ধরে এসেছিল আইফোন-আইপ্যাডের মতো পণ্য। করপোরেট প্রযুক্তি দুনিয়ায় সফল ছিলেন অ্যাপলের সিইও স্টিভ জবস। কিন্তু বদরাগী বস হিসেবেও তাঁকে চেনেন অনেক কর্মী। মিটিং তাঁর খুব বেশি পছন্দের ছিল না। যতটা পারেন সংক্ষেপে শেষ করার চেষ্টা করতেন। মিটিংয়ের সময় কাঙ্ক্ষিত লোক ছাড়া অন্য কারও উপস্থিত থাকা পছন্দ ছিল না তাঁর। একবার বিজ্ঞাপনী সংস্থার একটি মিটিংয়ে অপরিচিত একজনকে খেয়াল করে তাঁর সম্পর্কে জানতে চান। পরিচয় জানার পরও ভদ্রভাবে তাঁকে মিটিং রুম ছেড়ে যেতে বলেন। জবস বলেন, ‘আপনাকে এ মিটিংয়ে আমাদের দরকার নেই, ধন্যবাদ।’
অ্যালফাবেটের প্রধান নির্বাহী ল্যারি পেজ: গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেটের প্রধান নির্বাহী ল্যারি পেজের মিটিংয়ের দর্শন কিছুটা ভিন্ন। কোনো জরুরি সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে মিটিংয়ের অপেক্ষায় থাকতে নারাজ তিনি। তাঁর নির্দেশ হচ্ছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য মিটিংয়ের জন্য অপেক্ষা করা যাবে না। ২০১১ সালে গুগলের সিইও থাকাকালে প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের কাছে এ-সংক্রান্ত এক ই-মেইলও পাঠিয়েছিলেন তিনি। ওই মেইলের বিষয়বস্তু ছিল: হাউ টু রান মিটিংস ইফেক্টেভলি। তাঁর পরামর্শ ছিল—মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে, এমন কাউকে তৈরি করা। তিনি বলেন, বিশেষ দরকার না হলে কোনো মিটিং করার দরকার নেই। মিটিং যদি করতেই হয়, তবে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর তা নিয়ে দ্রুত মিটিং সেরে ফেলা ভালো।
ইয়েলপের প্রধান নির্বাহী জেরেমি স্টপেলম্যান: সবার সঙ্গে মিটিংয়ে ফল কী? প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইয়েলপের প্রধান নির্বাহী জেরেমি স্টপেলম্যান একসঙ্গে সবাইকে নিয়ে মিটিংয়ে বসার চেয়ে ব্যক্তিগতভাবে আলাদা করে বসেন। স্টপেলম্যান বলেন, অনেক সময় নিজেকে প্রতিষ্ঠানের মনোবিজ্ঞানী মনে হয়। তবে সবার কথা ও সমস্যা শুনতে ভালো লাগে। পরে সমস্যা দূর করে প্রতিষ্ঠানকে ঠিক রাখা সহজ হয়।
এভারনোটের সিইও ফিল লিবিন: প্রতিটি মিটিংয়ের একটা লক্ষ্য থাকে এভারনোটের প্রধান নির্বাহী ফিল লিবিনের। তাঁর লক্ষ্য হচ্ছে—কর্মীদের আরও দক্ষ করে তোলা। প্রতিটি বিভাগের কর্মীদের অন্য বিভাগ সম্পর্কে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখা। এ কারণে ফিল লিবিন প্রতিটি মিটিংয়ের সময় প্রতিষ্ঠানের সম্ভাবনাময় একজন কর্মীকে সঙ্গে রাখেন। এভারনোটের অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে একে ‘অফিসার ট্রেনিং’ বলে। এ কর্মসূচিতে কর্মীদের বিভিন্ন মিটিংয়ে অংশ নেওয়ার বিষয় নির্দিষ্ট করা থাকে। অনেক সময় এসব মিটিংয়ের বিষয়বস্তু কর্মীদের কাজের বা বিভাগের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হয় না। তারপরও তাঁদের মিটিংয়ে উপস্থিত থাকতে হয়। লিবিন মনে করেন, এতে প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য অংশের কাজগুলো সম্পর্কে জানার সুযোগ পান ওই কর্মী। ওই কর্মীর শুধু দর্শক হিসেবে বসে থাকার সুযোগ থাকে না। প্রশ্ন করতে ও কথা বলার সুযোগও থাকে।
আমাজন সিইও জেফ বেজোস: সিদ্ধান্ত যদি নিতেই হয়, তবে তর্ক-বিতর্ক করে নাও। এটাই মিটিং রুমের মন্ত্র আমাজন সিইও জেফ বেজোসের। তাঁর মতে, মিটিং রুম হবে বিতর্কের জায়গা। আমাজন কর্মীদের বিভিন্ন বিষয়ে বিতর্ক করতে হবে। নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানাতে হবে। কোনো বিষয় যদি কারও অপছন্দ হয় বা ভিন্নমত থাকে, তবে তা নিয়ে কর্মীরা ভদ্রভাবে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবেন। অস্বস্তিকর হলেও বিতর্ক করার সব রকম সুযোগ দেন বেজোস। সামাজিক সখ্যের ভিত্তিতে কোনো সিদ্ধান্তে একমত হওয়ার সুযোগ নেই তাঁর প্রতিষ্ঠানে। তর্ক-বিতর্ক শেষে একমত হওয়ার পর সবাইকে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়।
from ICT Shongbad http://ift.tt/2pbRhQY
Comments
Post a Comment