উন্নত বিশ্বের আদলে বাংলাদেশেও দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা দিতে চায় সরকার। চলতি বছরেই এ সেবা চালু হবে বলে সরকারের শীর্ষ মহল থেকে বারবার উচ্চারিত হয়েছে। তবে বাংলাদেশে থ্রিজি সেবা সম্প্রসারণে মোবাইল ফোন অপারেটররা ৩০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেও লাভজনক অবস্থানে আসতে পারেনি। দেশে বর্তমানে যত স্মার্টফোন আছে তার মাত্র ৪ থেকে ৫ শতাংশ ফোরজি সেবার উপযোগী।
এছাড়া রেভিনিউ শেয়ারিং (রাজস্ব ভাগাভাগি) এবং স্পেকট্রাম চার্জে (তরঙ্গ ফি) আপত্তি রয়েছে অপারেটরদের। তারা এসব কারণে ফোরজি সেবা দিতে আগ্রহী নয় বলেও সম্প্রতি বিটিআরসি এবং টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের কাছে চিঠি দিয়েছে মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব। এসব কিছু বিবেচনা করে খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে ফোরজির ভবিষ্যৎ অন্ধকারই বটে।
সংগঠনটির মহাসচিব টিআইএম নুরুল কবীরের স্বাক্ষরিত এ চিঠিতে বলা হয়েছে, ফোরজি তরঙ্গ নিলামের জন্য মেগাহার্টজ প্রতি তরঙ্গের দাম ২০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা অনেক বেশি। বেশি দামের কারণে বর্তমানে সরকারের কাছে ১৪৮ মেগাহার্টজ তরঙ্গ অব্যবহৃত আছে। অন্যদিকে তরঙ্গস্বল্পতার কারণে অপারেটররা মানসম্পন্ন সেবা দিতে পারছে না। সরকার একদিকে গ্রাহকসেবা উন্নত করতে চায় কিন্তু তরঙ্গের দাম কমাতে রাজি নয়, এমন নীতি সাংঘর্ষিক।
ফোরজির জন্য প্রস্তাবিত বিভিন্ন মূল্যকে অবাস্তব উল্লেখ করে এগুলো সংশোধনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং বিটিআরসিকে অনুরোধ করা হয়েছে চিঠিতে। চিঠিতে আরও বলা হয়, গত তিন বছরে তৃতীয় প্রজন্মের (থ্রিজি) সেবায় বিনিয়োগ করা ৩০ হাজার কোটি টাকা থেকে এখনো তারা লাভের মুখ দেখতে পারেনি। এ অবস্থায় আরও হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করলে সেই ক্ষতি কাটিয়ে ব্যবসা করা অপারেটরদের পক্ষে সম্ভব নয়।
ফোরজিতে বিনিয়োগে তাদের প্রতিবন্ধকতা, টেলিযোগাযোগ খাতে অপারেটরগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জ এবং বিদ্যমান সাংঘর্ষিক কিছু বিষয় চিঠিতে তুলে ধরা হয়েছে। অ্যামটব বলছে বিদ্যমান নীতিমালার সংশোধন, যথেষ্ট পরিমাণ তরঙ্গ নিশ্চিত এবং দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে আস্থার পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব হলে অপারেটররা ফোরজি সেবা চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
অ্যামটবের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত রেভিনিউ শেয়ারিং ১৫ শতাংশ করার বিষয়ে আপত্তি জানানো হয়েছে। একই সাথে স্পেকট্রামের ফিকেও উচ্চ হার বলে উল্লেখ করা হয়। থ্রিজির বিনিয়োগ থেকে এখনো মুনাফা না আসায় হতাশা প্রকাশ করে তারা বলেন, নতুন করে আবারও এ ধরনের বিনিয়োগে গেলে অপারেটরদের জন্য টিকে থাকায় কঠিন হয়ে যাবে। এজন্য নীতিমালার বেশ কিছু সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য তাদের পক্ষ থেকে বিটিআরসি চেয়ারম্যানকে অনুরোধ জানানো হয়।
ফোরজির প্রস্তাবিত নীতিমালার কয়েকটি বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ফোরজি সেবা থেকে অপারেটরদের যে আয় হবে, তার ১৫ শতাংশ সরকারকে রাজস্ব পরিশোধ করতে হবে। বর্তমানে থ্রিজি ও অন্যান্য সেবার জন্য অপারেটররা তাদের আয়ের সাড়ে ৫ শতাংশ সরকারকে দেয়, ফোরজির জন্য সেটি ১৫ শতাংশ করার কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়।
অ্যামটব বলছে, এমনটি করা হলে ফোরজিতে বিনিয়োগ করে তা থেকে মুনাফা করার কোনো সম্ভাবনা থাকবে না। ১৫ শতাংশ হারে আয় ভাগাভাগি করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে চিঠিতে আরও বলা হয়, বর্তমানে টেলিযোগাযোগ খাতে উচ্চ হারে কর, স্পেকট্রাম ফি, গ্রাহক প্রতি নিম্ন গড় আয়, কম পরিমাণ ইন্টারনেট ডেটা ব্যবহার, ফোরজি উপযোগী মোবাইল ফোন স্বল্পতাকেও এই সেবা চালুর বড় প্রতিবন্ধকতা বলে মনে করে অপারেটররা।
তরঙ্গ ব্যবহারে প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা সুবিধার জন্য মেগাহার্টজ প্রতি ৫৬ থেকে ৬৪ কোটি টাকা নেওয়ার চিন্তার সঙ্গেও একমত নয় অ্যামটব। এ বিষয়ে চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০১১ সালে তরঙ্গ লাইসেন্স নবায়নের সময় বিটিআরসি প্রযুক্তি নিরপেক্ষতার জন্য বাড়তি অর্থ না নেওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু এখন বাড়তি অর্থ নেওয়া হলে তা তরঙ্গের সর্বোচ্চ ব্যবহারকে বাধাগ্রস্ত করবে। প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা হলো যেকোনো তরঙ্গে যেকোনো প্রজন্মের টেলিযোগাযোগ সেবা দেওয়ার সুবিধা।
এদিকে গত বুধবার বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদের সাথে অপারেটরদের সংগঠনের নেতৃবৃন্দের বৈঠকেও একই মনোভাবের পুনর্ব্যক্ত করেছেন তারা। ওই বৈঠকে ফোরজি নীতিমালায় রাজস্ব ভাগাভাগি, স্পেকট্রাম চার্জের বিষয়ে আপত্তি জানানো হয়েছে। তবে বিটিআরসি এসব বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেবে তা পরবর্তী কমিশন বৈঠকে চূড়ান্ত করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে অ্যামটবের মহাসচিব নূরুল কবীর বলছেন, ফোরজি নিলামে যাওয়ার জন্য আমাদের বিজনেস কেইসটাও দেখা দরকার। আমাদের পেন্ডিং সে সমস্যাগুলো আছে সেগুলো সরকারের কনসিডার করা উচিত। ইনভেস্টররা যাতে উৎসাহিত হয় সেই জিনিসগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে অকশন গাইডলাইন তৈরি করা উচিত। আমরা সরকারকে বলবো টেকনোলজি নিউট্রালিটি এবং শেয়ারিংয়ের জায়গাগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে এবং এতেই কোয়ালিটি অব সার্ভিস বাড়বে।
from ICT Shongbad http://ift.tt/2pOH35E
Comments
Post a Comment